০৫:১৬ পূর্বাহ্ন শুক্রবার, ২৩-মে ২০২৫

চৌগাছার শতাধিক গ্রাম পুলিশের ৫২ মাসের বেতন বকেয়া প্রায় ৭০ লাখ টাকা

প্রকাশ : ২২ মে, ২০২৫ ১০:২৯ অপরাহ্ন

শীর্ষনিউজ, যশোর: যশোরের চৌগাছা উপজেলায় কর্মরত গ্রাম পুলিশ সদস্যদের ৫২ মাসের বকেয়া বেতন বকেয়া রয়েছে। উপজেলায় ১০৮ জন গ্রাম পুলিশের থানা হাজিরা বাবদ বকেয়া বেতন ভাতার পরিমান প্রায় সত্তর লাখ টাকা। বকেয়া টাকা পেতে তারা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও লাভ হচ্ছেনা। এ অবস্থায় দরিদ্র গ্রাম পুলিশরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও গ্রাম পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তারা গ্রামের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন গ্রামপুলিশের সদস্যরা। সরকারি সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মঘন্টা ৮ ঘন্টা নির্ধারিত থাকলেও গ্রাম পুলিশদের কর্মঘন্টার কোন হিসাব নেই। কখনো চেয়ারম্যান মেম্বরদের হুকুম, কখনো থানা পুলিশ, আবার কখনো উপজেলা প্রশাসনের হুকুম তামিল করতে করতে তাদের দিনরাত কেটে যায়।

চৌগাছা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন পরিষদে ১০৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য আছেন। প্রতিমাসে ছয় হাজার ৬'শ টাকা বেতন-ভাতা পান তারা । এর মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা।

এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন থানায় হাজিরা দিয়ে নিজ ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদন দিতে হয়। এজন্য হাজিরা বাবদ প্রতিদিন ৩'শ টাকা হারে কোন মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা কোন মাসে ১ হাজার ৫'শ টাকা পেয়ে ভাতা পেয়ে থাকেন তারা । চৌগাছা উপজেলায় ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫২ মাসের হাজিরা বকেয়া রয়েছে। সে হিসেবে এক জন গ্রাম পুলিশের ৫২ মাসের বকেয়া বাবদ পাওনা রয়েছে কমপক্ষে ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। অর্থাৎ উপজেলায় ১০৮ জন গ্রাম পুলিশের বকেয়া বাবদ পাওনা আছে ৬৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা।

গ্রাম পুলিশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অংশের বেতন-ভাতা এবং থানায় হাজিরার জন্য যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা সাধারণত সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ আয় হতে পরিশোধ করা হয়। সরকারি অংশ থেকেও ইউপি অংশের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ি ইউপি অংশ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হতে সংকুলান না হলে হাটবাজার ইজারা আয়ের ৪১ শতাংশ হতে তাদের পাওনা দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে। তবে সেসব নিয়ম যথাযথভাবে মেনে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি।

উপজেলা গ্রাম পুলিশ সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানান, পরিষদের দলিল খরচের এক শতাংশ টাকা থেকে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা। কিন্ত ২০১৮ সলের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত হাজিরা ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর পরে থেকে আবার দেওয়া শুরু করে। বকেয়া টাকার জন্য বার বার প্রশাসনকে বলেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন যশোর জেলার সকল উপজেলায় বিনোদন ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু চৌগাছায় আমাদের কোনো বিনোদন ভাতা দেওয়া হয়না। তিনি জানান, হাজিরা ভাতা বকেয়া থাকার বিষয়টি তাদের জন্য বেশি কষ্টকর। কারণ, সপ্তাহে একদিন থানায় আসা-যাওয়া করতে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়।

বেতন ভাতা পরিশোধের দায়িত্বে নিয়েজিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারি জামির হোসেন বলেন, আমি ২০২২ সালের মে মাস থেকে দায়িত্ব পেয়েছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কোনো বকেয়া পড়েনি। বকেয়ার বিষয়টি আমার আগে যে দায়িত্ব পালন করেছে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

পূর্বে দায়িত্ব পালনকারী খাজা আহমদ বলেন, স্থানীয় রাজস্ব (ভূমি) আয়ের ১% থেকে হাজিরার টাকা দেওয়া হয়। আয় না থাকায় সে সময় তাদের বেতন বকেয়া পড়েছিল যা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা সম্ভভ হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম বলেন, আমি অল্প কিছুদিন এই উপজেলায় যোগদান করেছি। কাদের কি পরিমান বকেয়া রয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে খোজ খবর নিয়ে দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।

শীর্ষনিউজ/প্রতিনিধি/এ. সাঈদ