
shershanews24.com
প্রকাশ : ২০ মে, ২০২৫ ০৮:০৩ অপরাহ্নশীর্ষনিউজ, ঢাকা: ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘শখের বশে’ ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করছে এবং ইসরায়েল দেশটি দ্রুত একটি ‘অযোগ্য ও একঘরে’ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা ইয়ার গোলান।
মঙ্গলবার (২০ মে) এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের বিরোধী দলের এই শীর্ষ নেতা।
সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বামপন্থি বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ইয়ার গোলান বলেন, যদি আমরা সুস্থ রাষ্ট্র হিসেবে আচরণে ফিরতে না পারি, তবে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, একটি সুস্থ রাষ্ট্র কখনো সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শখের বশে শিশুদের হত্যা করে না এবং জনগণকে জোরপূর্বক বিতাড়নের লক্ষ্য গ্রহণ করে না।
ইসরায়েলি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে গোলান বলেন, এই সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ ও নীতিহীন লোকদের দ্বারা পূর্ণ, যাদের সংকট মোকাবিলার কোনো যোগ্যতা নেই। তাদের নেতৃত্বে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিরোধী নেতা গোলানের বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন মহলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোলানের মন্তব্যকে ‘রক্তপাতের অপবাদ’ ও ‘বন্য উসকানি’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, আমি ইসরায়েলের সাহসী সেনা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইয়াইর গোলানের এই উগ্র উসকানির তীব্র নিন্দা জানাই। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক বাহিনী।
চরম ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগাভির গোলানকে ‘ইহুদিবিরোধী রক্ত-অপবাদ ছড়ানো’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেন, তিনি ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ন্যায়’ কথা বলছেন।
এছাড়া যোগাযোগমন্ত্রী শ্লোমো কারহি গোলানকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ করেন, তিনি ইসরায়েলের সেনাদের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের প্রাক্তন মিত্র এবং বর্তমান বিরোধী জোটের অন্যতম নেতা বেনি গ্যান্টজ গোলানের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি গোলানকে বক্তব্য প্রত্যাহার ও দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানান।
গোলানের এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন চরমপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিপক্ষে থাকা কিছু ইসরায়েলি জনগণ আরও উগ্র ভাষায় কথা বলছে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা হারেটজ এক প্রতিবেদনে জানায়, দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ একটি বসতিতে বসবাসকারী রিভকা লাফেয়ার নামের এক চরমপন্থি নারী প্রকাশ্যে গাজা উপত্যকার লাখ লাখ মানুষকে ধ্বংস ও উৎখাত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধ নিতে এবং গাজাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর- শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারী পর্যন্ত কাউকেই ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, গাজা ধ্বংসের জন্য তিনি বাইবেলের ‘আমালেক’ জাতির ধ্বংসের কাহিনি উল্লেখ করেছেন- যেটি ছিল একটি পুরনো ধর্মীয় কাহিনি যেখানে একটি জাতিকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার কথা বলা হয়েছিল।
এই ধরনের বক্তব্য ইসরায়েলের ভেতরে যুদ্ধকে আরও সহিংস ও নিষ্ঠুর করে তুলছে। একইসঙ্গে এসব চরমপন্থী মতাদর্শ গাজায় সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়া, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলছে।
শীর্ষনিউজ/ বান্না