শুক্রবার, ০৯-মে ২০২৫, ১০:২৩ অপরাহ্ন
  • অপরাধ
  • »
  • আলজাজিরার তথ্যচিত্রে হাসিনার ভয়াবহ দুঃশাসনের বিবরণ

আলজাজিরার তথ্যচিত্রে হাসিনার ভয়াবহ দুঃশাসনের বিবরণ

shershanews24.com

প্রকাশ : ০৫ মে, ২০২৫ ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

শীর্ষনিউজ, ঢাকা: শেখ হাসিনার পতন এবং পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। এতে আওয়ামী লীগের আমলে শেখ হাসিনার ভয়াবহ দুঃশাসনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) প্রকাশিত ‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ আফটার শেখ হাসিনাস ফল’ শিরোনামে তথ্যচিত্রে ফুটে উঠেছে ১৫ বছর পুলিশ, র‌্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে কীভাবে খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী মত ও চিন্তাশক্তিকে দমন করা হয়েছিল। এছাড়া উঠে এসেছে কীভাবে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস রচনা করেছিলেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জেন-জির বেশির ভাগের কাছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকলেও অনেক অভিভাবকের কাছে তিনি ছিলেন ট্রাজিক নায়িকা। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এই সময়ে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী বিনাবিচারে আটকে রাখে।

ভুক্তভোগী পরিবারের একজন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। ২০১৫ সালে তার বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকরের ৯ মাস পর হুম্মামকে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী অপহরণ করে একটি জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে। হুম্মাম জানিয়েছেন, তাকে ‘আয়নাঘর’ নামে একটি কুখ্যাত গোপন কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল।

আলজাজিরাকে হুম্মাম কাদের বলেন, সত্যি কথা বলতে এটাকে আয়নাঘর বলা হয়; কারণ এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি কাউকে দেখতে পাবেন না। এটা এমনি একটি জায়গা যেখানে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। আয়নাঘরে নির্যাতনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তারা যখন খুশি আসে, তুলে নেয়, জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মারধর করে। এটা একটা মানসিক নির্যাতন।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জোরপূর্বক গুমের শিকার কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের একজন আবদুল্লাহিল আমান আযমী। দীর্ঘ আট বছর আয়নাঘরে আটকে রাখার পর গত বছরের ৭ আগস্ট তাকে একটি রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ৬৯ হাজার ৭৯৪ ঘণ্টা আমি আটক ছিলাম। আমি রাতে কখনো ঘুমাতে পারতাম না। প্রতি রাতে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা। একটু শব্দ হলেই আমি ভয় পেতাম। ওরা কী আমাকে নিয়ে যেতে আসছে? আমি শুধু ভোরের অপেক্ষা করতাম। কারণ আমি মনে করতাম, তারা আমাকে দিনের বেলায় হত্যা করবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো কারণ ছাড়াই ২০০৯ সালে জেনারেল আযমীকে বরখাস্ত করা হয়।

ভয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। কিন্তু ২০২৪ সালের জুন মাসে এসে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যায়। চাকরিতে কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্র সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ অবৈধ ঘোষণার পর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন।

জুলাই মাসে একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও করে। এর মধ্যেই তিনি ভারতে পালিয়ে যান।

তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং জনগণের প্রতি তাদের সহমর্মিতার চিত্র। সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

শীর্ষনিউজ