শীর্ষনিউজ, ঢাকা: ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ব্রিফ করা ভারতীয় মুসলিম নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। তিনি নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত। উল্টো তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহের একজন মহিলা সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অপমানজনক ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য তার ক্ষমাপ্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেছে। কোর্ট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি নতুন আইপিএস অফিসারদের দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্ত্রীর ‘নোংরা মন্তব্যের’ জন্য তাকে তীব্রভাবে তিরস্কার করেন এবং বলেন, তার ক্ষমা আন্তরিক নয়।
তিনি বলেন, এটা কী ধরনের ক্ষমা? ক্ষমার কিছু অর্থ আছে। কখনো কখনো মানুষ শুধু মামলা থেকে বাঁচতে নরম ভাষা ব্যবহার করে, আবার কখনো তারা মায়াকান্না করে। আপনার ক্ষমা কী ধরনের? আপনি এমন ভাব দেখাতে চান যে কোর্ট আপনাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। এতদিন আপনার নোংরা মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ক্ষমা চাইতে কিসে বাধা দিয়েছে?
তিনি আরও বলেন, এটি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি ‘আবেগপ্রবণ বিষয়’ এবং মন্ত্রীর উচিত ছিল আরও সংবেদনশীল হওয়া।
কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের মধ্যে তিনজন আইপিএস অফিসারের একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করতে হবে, যার মধ্যে একজন মহিলা অফিসার থাকবেন। এই দলকে ২৮ মে এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার থেকে সাময়িক সুরক্ষা দেওয়া হলেও কোর্ট জোর দিয়ে বলেছে, তাকে ‘পরিণতি ভোগ করতে হবে’। মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে কোর্ট বলেছে, আমরা এটির ওপর নজর রাখব। এটি আপনাদের জন্য একটি পরীক্ষা।
অপারেশন সিঁদুরের অংশ হিসেবে ভারত সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী শিবিরে হামলা চালানোর পর, বিজয় শাহ একটি জনসভায় বলেন, কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের বিধবা বোনেরা, তোমাদের সম্প্রদায়ের একজন বোন তোমাদের উলঙ্গ করে দেবে। (প্রধানমন্ত্রী) মোদিজি প্রমাণ করেছেন, তোমাদের সম্প্রদায়ের মেয়েদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায়।
যদিও তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি, তার মন্তব্য কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রতি লক্ষ্য করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যিনি অপারেশন সিঁদুরের ব্রিফিংয়ে সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি ছিলেন। এই মন্তব্য বিরোধী দল, সামরিক বাহিনীর প্রবীণ সদস্য এবং এমনকি বিজেপির কিছু সদস্যের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নিয়ে বিজয় শাহের বিরুদ্ধে ‘নোংরা ভাষা’ ব্যবহারের জন্য তীব্র সমালোচনা করে এবং তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেয়।
হাইকোর্ট তীক্ষ্ণ মন্তব্যে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, সম্ভবত এই দেশের শেষ প্রতিষ্ঠান, যা সততা, পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, ত্যাগ, নিঃস্বার্থতা, চরিত্র, সম্মান এবং অদম্য সাহসের প্রতিফলন... বিজয় শাহ কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে এটিকে লক্ষ্য করেছেন।
এছাড়া বৃহস্পতিবার, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এই মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং অসংবেদনশীল। ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বক্তৃতা দেওয়ার সময় সংযমী হওয়ার আহ্বান জানান।
শীর্ষনিউজ/ বান্না