শীর্ষনিউজ, দিনাজপুর: অবশেষে বাতিল করা হলো আমন মৌসুমে চাল সরবাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে না আসা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০ হাসকিং মিলের নিবন্ধন। গত বুধবার (২১ মে) দিনাজপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবির নাথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে নিবন্ধন বাতিলকৃত চালকলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব চালকলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু এই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ মৌসুমে ৩ হাজার ২৫৮ দশমিক ৩৩০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ৭৯৫ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ১ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়। তবে ধান এসেছে ১ হাজার মেট্রিক টন।
জানা যায়, উপজেলার মোট ১২৭ নিবন্ধিত চাল চালকলের মধ্যে ১২ টি অটো চালকল রয়েছে। বাকি সব হাসকিং। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজিতে ধান, ৪৭ টাকা কেজিতে সেদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার দর নির্ধারণ করে দেয়। আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় ৪০টি চালকল মালিক লোকসানের ভয়ে সরবরাহের চুক্তি করেননি। খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন রক্ষায় ৬১ চালকলের মালিকরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও চাল সরবরাহ করেছেন।
চুক্তির বাইরে থাকা ফুলবাড়ী পৌর এলাকার একাধিক চালকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এবার চুক্তি করলে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। ব্যবসার তহবিলই গায়েব হতো। একই সঙ্গে দেনায় পড়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়ীঘর সব চলে যেতো। এসব ভেবেই এবার চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি তারা। শুনছেন খাদ্য বিভাগ তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে।
উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুর এলাকার আবতার হাসকিং মিলের মালিক আবতার আলী বলেন, ‘তার মিলের নামে বরাদ্দ করা ২৮ দশমিক ৫৮০ টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলেন। শুধুমাত্র নিবন্ধন রক্ষার জন্যই লোকসান জেনেও বরাদ্দের পুরো চাল সরবরাহ করেছেন।’
সরকারি এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুক্তির বাইরে থাকা উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার ভাই ভাই হাসকিং মিলের মালিক এনামুল হক বলেন, ‘আসলে বলার কিছু নেই। চাল সরবরাহ করতে আমরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ধান-চালের দাম অনেক বেশি ছিল। আমরা কিনতে না পারলে সরকারকে সরবরাহ করবো কোথা থেকে? এ বছর দিতে পারিনি, আগামীতে দেবো। এজন্য কি নিবন্ধন বাতিল করতে হবে?’
উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক মণ্ডল বলেন, এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে সমিতিই সিদ্ধান্ত নেবে।
৪০টি চালকলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমন মৌসুমে ৪০ জন চালকলের মালিক সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহ চুক্তি না করে শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এ কারণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’
শীর্ষনিউজ/প্রতিনিধি/এ. সাঈদ