বৃহস্পতিবার, ২২-মে ২০২৫, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
  • অপরাধ
  • »
  • ফেনীতে কলেজছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য: পলাতক হাসপাতালে আনা বন্ধু

ফেনীতে কলেজছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য: পলাতক হাসপাতালে আনা বন্ধু

shershanews24.com

প্রকাশ : ২১ মে, ২০২৫ ০৪:৩৫ অপরাহ্ন

শীর্ষনিউজ, ফেনী: ফেনীতে কলেজ শিক্ষার্থী মিতা রানী নাথের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সেই রহস্য এখনও উদঘাটন করা যায়নি। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা বন্ধু অজয় সাহারও (২১) খোঁজ নেই।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় মিতাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান অজয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ঘণ্টা পর মারা যান তিনি।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের সহদেবপুর এলাকার বাসিন্দা তপন লাল নাথের মেয়ে ফুলগাঁজী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিতা রানী গত শনিবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, সেদিন রাতে অজয়সহ আরও দুজন মিতাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন অজয় চিকিৎসককে মিতার বন্ধু পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কথা জানান।

নিহতের বড় বোন অপর্ণা বলেন, অজয়ের সঙ্গে মিতার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। সেদিন রাত ৮টা ৫২ মিনিটে মিতার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। তখন সে দ্রুত বাসায় ফিরছে বলে বাবাকে জানাতে বলেছিল। রাত ৯টা ১২ মিনিটে মিতার বন্ধু অজয় ফোন করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবর জানান। একইসঙ্গে তাঁকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার কথাও বলেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমার ভাইকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে নিশাত নামে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীসহ অজয় ছিল। পরবর্তীতে মিতার মৃত্যুর পরপরই হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন অজয়। অজয় যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে তাহলে কেন পালিয়ে গেল? এজন্যই আমরা সন্দেহ করছি। আমরা চাই এসব ঘটনার সকল রহস্য বের হোক। সেদিন যদি দুর্ঘটনা হয়েও থাকে তাহলে দুর্ঘটনাস্থল কোথায় বা কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা জানতে চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত চন্দ্র দাস বলেন, অজয় আমার খুব কাছের ছোট ভাই। আমার পরিবারের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। শনিবার অজয় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। সেদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে আমাকে ফোন করে একটি মেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে জানায়। আমাকে দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলে। মাঝপথে গেলে আমার স্ত্রী ফোন করে বলে, অজয় তাকে ফোন করে একটি জামা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। আমার মোটরসাইকেলটি সেদিনই হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছি। গাড়ির সবকিছু আগের মতোই রয়েছে। একদম কোনো ধরনের দাগ বা ক্ষতিও হয়নি।

নিশাত চন্দ্র আরও বলেন, অজয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলেও মিতার বিষয়ে তেমন জানাশোনা ছিল না। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানতাম। সেদিন রাত থেকে অজয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। এখানে আমার বা স্ত্রীর কোনো দায় নেই। শুধু খবর পেয়ে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে দুই সঙ্গীকে নিয়ে আলোচনা চলছে তাতে আমরা রীতিমতো বিব্রত।

এদিকে মিতার মৃত্যুর ঘটনায় গত সোমবার তাঁর বাবা তপন লাল নাথ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে পৌরসভার পশ্চিম মধুপুর এলাকার জয়ন্ত সাহার ছেলে ও ফেনী সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অজয় সাহাকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারে শহরতলীর লালপোল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অজয় সাহা মিতাকে নিয়ে মহাসড়কের লালপোল এলাকায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় ছিটকে পড়ে মারা যান মিতা। এজন্য তাঁকে আসামি করে সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লিখিত ঘটনাস্থল ও দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে লালপোল ও খাইয়ারা এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে কেউই এ ধরনের দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি।

 

লালপোল এলাকার ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এখানে কাজ করি। সেদিন আশপাশে এমন কোনো দুর্ঘটনার তথ্য পাইনি। এছাড়াও এ সড়কে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা শুনতে পাই। সেদিন এমন কিছু কারও কাছে শুনিনি।

খাইয়ারা এলাকার বাসিন্দা রিফাত হোসেন বলেন, সেদিন আমাদের এলাকায় এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেখে এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।

অন্যদিকে ছেলের লাপাত্তা ও মিতার মৃত্যু নিয়ে কথা হয় অজয়ের বাবা ফেনী বড় বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৮ মে থেকে ফেনী কলেজে অজয়ের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছিল। শনিবার বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলে সে দোকান থেকে বের হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় ফিরে এক মেয়ে তার মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায়। তখন তার সঙ্গে নিশাত ছিল। পরবর্তী রাতে অজয় বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর এখনও আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ওর মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

অজয়ের চাচা প্রশান্ত সাহা বলেন, আমরা দুই ভাই শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। অজয় আমাদের চালের দোকানে বসত। এই সম্পর্কের বিষয়েও আমরা জানতাম না। কীভাবে কী হয়ে গেছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।

এ ব্যাপারে মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন উর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শীর্ষনিউজ/এ. সাঈদ