শীর্ষনিউজ, ঢাকা: শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদ-উল আযহা’র পূর্বেই ১০০% উৎসবভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ীভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ শামীম আল মামুন জুয়েল-এর সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৭মে থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার, মোঃ হারুনুর রশিদ মজুমদার, মোঃ শাজাহান খান, মোঃ হাবিবুর রহমান, বিটিএ’র উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব আলী আহামেদ, বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম, আবুল কাসেমসহ শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ বলেন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। আর শিক্ষক হচ্ছেন ‘শিক্ষার মেরুদন্ড’, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। কিন্তু এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১,০০০/- টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০/- টাকা চিকিৎসাভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
NTRCA এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১২,৫০০/- প্রারম্ভিক বেতনে শত-শত মাইল দূরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কোন বদলীর ব্যবস্থা না থাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে EFT এর মাধ্যমে সয়ংক্রিয় ভাবে বেতন প্রদান করা হলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফলতির কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৩ থেকে ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া বিগত সরকার কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পায়নি। সদ্য বিদায়ী মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক-কর্মচারদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেট অপ্রতুল। নেতৃবৃন্দ শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির জোর দাবি জানান।
শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে বিগত সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
এমতাবস্থায় সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ সৃষ্টি, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্টকরণ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নিকট নিম্নলিখিত ১১ দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে-
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হবে ততদিন পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলবে এবং এখনও সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারী এপ্রিল মাসের বেতন পায়নি বিধায় আগামীকাল ১৮ মে সকাল ১১ টায় শিক্ষা ভবন ঘেরাও করা হবে।
শীর্ষনিউজ/এওয়াই