আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ভৈরব নদীর পাড় দখল করে এক আ’লীগ নেতা গড়ে তুলেছেন আলীসান সাম্রাজ্য। নিজের নামে শুধু কলেজই প্রতিষ্ঠা করেননি, গ্রামের নামও পাল্টে দিয়ে নিজের নামে করে আত্ম অহংকারের এক নজীর স্থাপন করেছেন। আর নদী দখল বৈধ করতে ১২৩ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত করেছিলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল, যেটি ৫ আগষ্টের পর ছাত্রজনতা গুড়িয়ে দেয়।
ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর এলাকায়।
গ্রামবাসির অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমসের এবং তার দুই ভাই শফিকুল শমসের ও তরিকুল শমসের দীর্ঘদিন নদীর ৫০ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।
দখলদারিত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষকদের নদীতে নামতে পর্যন্ত বাধা দেয়া হচ্ছে। নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পাকা প্রাচীর, যাতে সাধারণ মানুষ নদীতে মাছধরা ও পানি ব্যবহার করতে না পারে। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় বছরের পর বছর এ দখলবাজী চলে আসলেও কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যাক্তিরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর গ্রামের নদীর দুই পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শস্যখেত। কিন্তু তা কোনো কৃষকের নয়, ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের ছায়ায় রাশেদ শমসের ও তার ভাইয়েরা বছরের পর বছর ধরে নদীর এ জমিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
স্থানীয় কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নদীর দুই পাড় পুরো দখলে। আমরা নদীতে নামতেই পারি না। ব্রিজের পাশে দেয়াল তুলে দিয়েছে, যেনো কৃষকরা একফোঁটা পানিও না পায়। এটা কি স্বাধীন দেশে সম্ভব? তাহলে ৫ আগষ্ট কেন হলো ?
জাহাঙ্গীর আলম সর্দার নামে এক গ্রামবাসি বলেন, তারা শেখ মুজিবের মুর্যাল বানিয়ে, কলেজের নাম ব্যবহার করে নদী ও সরকারি জমি দখল করেছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এখন আবার নতুন করে দখল শুরু করেছে শফিকুল শমসের। এমনকি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জমিও রেহাই পাচ্ছে না এ চক্রের হাত থেকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কেনা জমির নিচে নদীর জায়গা ছিলো। সেটি দখল করে তাতে ছাতা স্থাপন করেছে শফিকুল। এখন সে আমার জমিতেও প্রাচীর তুলছে। আমি আদালতে গিয়েছি, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, তবু কাজ থামেনি। এটাই কি আইনের শাসন?
অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল শমসের বলেন, ছাতা আমরা অস্থায়ী ভাবে নির্মান করেছি। এটা স্থায়ী না। চাইলে ভেঙে দেবো। তবে তিনি জমি দখলের অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম বলেন, যারা নদীর জমি দখল করে প্রাচীর তুলেছে, তাদেরকে কঠোর ভাবে দমন করা হবে। কারণ, নদী দখলের কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ২/১ দিনের মধ্যেই প্রশাসন এ্যাকশানে যাবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কুমার দাস বলেন, নদীর জায়গা দখল করে চাষাবাদ করার কোন সুযোগ নেই। আমরা দ্রুতই লোক পাঠিয়ে তালিকা করবো। যদি দখল হয় তাহলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিবো।
শীর্ষনিউজ/এওয়াই