শীর্ষনিউজ, ঢাকা: জনগণের সম্মতি ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাখাইন করিডোর, লাভজনক ও দক্ষভাবে পরিচালিত হবার পরেও দক্ষতার অজুহাতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সংগঠনের এক সভায় এর তীব্র প্রতিবাদও জানানো হয়। স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো আলোচনা না করে স্টার লিংকের সাথে চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি চুক্তিরও সমালোচনা করেন সভার বক্তারা।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অধিকার কমিটির কার্যকরী সভার প্রস্তাবে এসব কথা বলা হয়। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক ড. হারুন-উর-রশীদ, স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতা সজীব তানভীর এবং আকরাম খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, গবেষক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী ও কৌশিক আহমেদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রতিনিধি রাফিউজ্জামান ফরিদসহ কমিটির সদস্যরা।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে আগের মতই শ্রমিক অধিকার ভয়াবহভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা বলেন যে, ‘টিএনজেড গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা ঈদের বোনাস, বকেয়া ও সার্ভিস বেনেফিটের দাবিতে ঈদের আগের থেকেই আন্দোলন করে আসছে এবং সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে ৭ মে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করার জন্য। কিন্ত তা কার্যকর না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গত ৮ মে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করলে যৌথবাহিনী বাধা দেয় এবং তাদের উপর হামলা করে। এতে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, শ্রমিক প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম, নিখিল দাস, রুবিনা, অর্চনা রানী, সামিউল, সাদ্দাম, তোফাজ্জোল হোসেন, আশরাফুল সহ ২০ জনের বেশি আহত হন।’
সভায় আরও বলা হয় যে, শুধু এই ঘটনাই নয়, কারখানা খোলা বা বকেয়া মজুরির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন দমনে সরকারের সক্রিয়তা দেখা যায়, কিন্তু কারখানা খোলা বা তাদের পাওনা পরিশোধে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে রবিন টেক্স কারখানায় বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা রাজপথে নেমে এলে আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা সেলিম মাহমুদ ও রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। এর পাশাপাশি রিকশা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের পক্ষে লড়াইয়ে যুক্ত হলে শ্রমিক নেতা আল কাদেরী জয়, মিরাজ উদ্দিন, রোকন উদ্দিন, মিম আক্তার, শেফালি, সাদ্দামসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। বেক্সিমকো কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করার কারণে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি ফোরামের গাজীপুর সংগঠক খোরশেদ আলম কারাগারে আটক রয়েছেন। অধিকার কমিটির সদস্যরা এই ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং অবিলম্বে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
কমিটি পাইকারি হারে মিথ্যা মামলারও সমালোচনা করে এবং লেখক শিল্পী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে সুবিধামত ট্যাগ দিয়ে মিথ্যা মামলার অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানায়। কমিটি মনে করে যে, জুলাই গণহত্যার বিচার যথাযথভাবে না করে এই ধরণের পাইকারি হারে মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং এসব মিথ্যা মামলা দিনশেষে ফ্যাসিবাদকেই পুনর্বাসন ও প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে দেয়। অবিলম্বে যথাযথভাবে জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবি জানায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
সভায় আগামী ২৩ মে কমিটির পক্ষ থেকে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই?’ শিরোনামে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার একটি মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শীর্ষনিউজ/ বান্না