শীর্ষনিউজ, দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মারচে লিউস কিস্কু (৩৮)। পিতা-মৃত চরকা কিস্কু। স্ত্রী বাহামনি মুর্মু (২৮) এবং একমাত্র ছেলে মতিরাম কিস্কুকে (১) নিয়ে ছোট সংসার। স্ত্রী বাহামনি মুর্মু করেন কৃষিকাজ। সূর্য্যপাড়া গ্রামে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর।
মারচে ২৫ বছর বয়সে সেলুনে চুল কাটার কাজ শিখেন। পরে নিজেই একটি ছোট্ট বাঁশ-বেড়ার চালা দিয়ে আয়না টানিয়ে বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া মোড়ে শুরু করেন সেলুন ব্যবসা। কিন্তু গ্রামের লোকসংখ্যা কম হওয়ায় তেমন আয় রোজগার হতো না। সারাদিন দোকানে কাজ করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। তাই শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের চুল-দাড়ি কাটার কাজ। এজন্য তিনি নিজেই চুল যন্ত্রপাতির সাথে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার সঙ্গে রাখেন। প্রথম দিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে গিয়ে সারাদিন কাজ করে যা আয় হতো তাতেও সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাই মারচে এখন কাজের পরিধি বৃদ্ধি করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৪ থেকে ৬ টি গ্রামে চষে বেড়ান।
মারচের গ্রাহক মানেস হেম্ব্রম বলেন, ‘আগে আশ পাশের হাটে কিংবা ফুলবাড়ী সদরে গিয়ে চুল কাটতে হতো। এতে বাড়ীর শিশু-কিশোরদের চুল কাটা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন মারচে সেলুনের কাজ শেখে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল কাটার কাজ করায় তার যেমন আয়ের পথ হয়েছে, তেমনি গ্রামের মানুষেরও অর্থ এবং সময় দুটোই বেঁচে যাচ্ছে।’
পাতরাজ কিস্কু বলেন, আগে ফুলবাড়ী সদরে সেলুনে গিয়ে চুল কাটতে হতো। এতে বেশি টাকা ব্যয় হতো। এছাড়াও ছিল যাতায়াত ভাড়া। কিন্তু মারচে গ্রামে এসে অল্প টাকায় কাজ করে দেওয়ায় যাতায়াত ভাড়ার অর্থ যেমন বেঁচে যাচ্ছে তেমনি অল্প টাকায় নিজের চুল দাড়ি কেটে নেওয়া যাচ্ছে।
মারচে বলেন, ছোটকাল থেকেই কৃষি কাজে তার আগ্রহ হতো না। এজন্য ভিন্ন পেশার খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সেলুনের কাজ শিখবেন। ফুলবাড়ী পৌরশহরের এক সেলুনের দোকানে যোগাযোগ করলে কাজ শেখানো বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন ওই সেলুন মালিক। এতো টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় টাকার অভাবে সেখানে কাজ শেখা হয়নি মারচে লিউস কিস্কুর। এর ছয় মাস পরেই তার বন্ধু লেজারুস কিস্কু ভারতের থেকে সেলুনের কাজ শিখে এসে উপজেলার আটপুকুর হাটে সেলুন শুরু করেন। মারচে সেই বন্ধুর কাছে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এই দুইদিন করে ছয়মাস কাজ শেখেন। পরে নিজ গ্রামের মোড়ে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে শুরু করেন সেলুনের ব্যবসা। কিন্তু এতে তেমন রোজগার না হওয়ায় শুরু করেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ। বড়দের চুল কাটার মজুরি ৩০ টাকা. দাড়ি কাটা ২০ টাকা এবং বাচ্চাদের চুল কাটা ২০ টাকা করে নিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই এর চেয়ে কমও দিয়ে থাকেন। এতে করে দিনে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়ে থাকে। এছাড়া তার স্ত্রীও কৃষি কাজ করায় সেখান থেকেও কিছুটা বাড়তি আয় আসে। এতে সংসারের টানাপোড়েন থাকলেও স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলের ছোট সংসার চলছে সাচ্ছন্দ্যেই।
শীর্ষনিউজ/প্রতিনিধি/এ. সাঈদ