shershanews24.com
উদ্বিগ্ন দেশবাসী, সকলের চোখ যমুনায়
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ০২:১৫ অপরাহ্ন
shershanews24.com

shershanews24.com

শীর্ষনিউজ, ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করতে চাওয়ার খবর সামনে আসার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানান আলোচনা। বিএনপিসহ দেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পরস্পরের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মহলে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। দেশবাসীর মধ্যেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।

দেশের ক্রান্তিকালে অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন—এমনটা কোনো দলই চায় বলে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংস্কার ও হত্যাযজ্ঞের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা কী, তাও জানতে চায়।

দেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শনিবার (২৪ মে) বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করবে। যমুনার বৈঠকের দিকে তাই তাকিয়ে আছে সারা দেশ।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমাদের সাক্ষাতের সময় জানানো হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করতে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আমাদের আজ রাতে সাক্ষাতের সময়সূচি জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেবেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তার পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বৈঠক থেকেই স্পষ্ট হবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকছেন কি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠজনরা তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ জন্য শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হতে পারে। আর এই বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ড. ইউনূস সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। এ সংকটের সমাধানে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।

বিএনপি তার মিত্র দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। বিএনপি নেতারাও মনে করেন, এই মুহূর্তে ড. ইউনূস পদতাগ করলে দেশে সংকট বাড়বে। আওয়ামী লীগ মাঠে নেমে পড়তে পারে। তবে বিএনপি এ-ও মনে করে, ইউনূসের উচিত একটি রোডম্যাপ দেওয়া, এতে রাজনৈতিক সংকট নিরসন হতে পারে।

অন্যদিকে দিল্লি থেকে দেশকে বিভাজিত করার ছক কষা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিকে সব ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বারবার বিভাজিত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশেকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্যে।’

অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও বিভাজন কাটিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে অবিলম্বে বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলে দাবিদাওয়া আদায়ের রাজনীতি ও পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নয়; বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি।

শীর্ষনিউজ/ বান্না