শনিবার, ২৪-মে ২০২৫, ১১:৩৯ অপরাহ্ন
  • জেলা সংবাদ
  • »
  • মাদারীপুরে চুরি হওয়ায় শিশুটি এক মাসেও উদ্ধার হয়নি

মাদারীপুরে চুরি হওয়ায় শিশুটি এক মাসেও উদ্ধার হয়নি

shershanews24.com

প্রকাশ : ২৪ মে, ২০২৫ ০১:৫০ অপরাহ্ন

শীর্ষনিউজ, মাদারীপুর প্রতিনিধি: প্রকাশ্য দিবালোকে মাদারীপুর আড়াই শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু আব্দুর রহমান মাস পার হলেও উদ্ধার হয়নি। সিসিটিভিতে শিশু চুরির ভিডিও পেলেও দীর্ঘদিনে আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী শিশুটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে শিশুটিকে না পাওয়ায় পাগলপ্রায় তার পরিবার। 

নিখোঁজ শিশুর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গেলো ১৭ এপ্রিল মাদারীপুর সদর উপজেলার বড় মসজিদ এলাকার সিরাজ মুন্সি ও সুমি আক্তার দম্পত্তির অসুস্থ্য দুই বছরের মেয়ে জামিলাকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। তার দুইদিন পর ১৯ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বড় মেয়ে জান্নাতকে খাওয়াচ্ছিলেন মা সুমি আক্তার। এ সময় গোলাপি রঙের বোরকা পড়া এক নারী সুমির ৫ মাস বয়সী ছেলে আব্দুর রহমানকে কোলে তুলে আদর করার জন্য হাসপাতালের বারান্দা নিয়ে যায়। পর মুহূর্তেই মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে রহমানকে নিয়ে সটকে পড়ে সে। এরপর থেকে আর শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে খবর দেয়া হয় সদর থানা পুলিশকে। 

পুলিশ এসে হাসপাতালের বাহিরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যে, শিশুকে কোলে নিয়ে ইজিবাইকে করে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছে ওই নারী। বিষয়টি মুর্হুতের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরার হয় শিশু নিখোঁজের বিষয়টি। ওই দিন রাতেই একজন মহিলাকে সহেন্দ করে মাদারীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করে তার পরিবার। কিন্তু মাস পার হলেও এখনও মিমুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধরা ছোঁয়ার বাহিরে শিশুটির অপহরণকারীও। আর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার পরিবার। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। মাঝে মাঝেই ধর্ণা দিচ্ছেন পুলিশের কাছে। 

এঘটনায় গত ১২ মে এক নারীকে সন্দেহজনক আটক করে থানায় সোর্পদ করে এলাকাবাসী। কিন্তু ওই মহিলার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া পরে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে প্রকাশ্য দিবালোলে শিশুটি নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ্ন এলাকাবাসী। তাদের দাবী, হাসপাতালের মতো জায়গা থেকে শিশুটি চুরি হলে, সেখানের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। 

শিশুটির মা সুমি আক্তার বলেন, আমার দুই মেয়ের পর ছেলে সন্তান হয়। অনেক আদরের ছেলে আমার আব্দুর রহমান। কোনদিন ভাবি নাই, আমার পোলাটাকে এভাবে হারাতে হবে। কোন অসুখে মারা গেলে ভাবতাম, আল্লাহ নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন তো মরে গেছে না জীবিত আছে কিছুই জানি না। আব্দুর রহমান নিখোঁজের পর থেকে রাতে এক ফোটাও ঘুমাতে পারি না। যে করেই হোক, আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। পুলিশ প্রশাসনের কাছে একটাই দাবী, আমার সন্তানকে যেন উদ্ধার করে দেয়।

নিখোঁজ আব্দুর রহমানের পিতা সিরাজ মুন্সি বলেন, দিনে-দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে আমার সন্তানকে চুরি করে নিয়ে গেলো। এভাবে সরকারী হাসপাতাল থেকে যদি সন্তান চুরি হয়ে যেতে পারে, তাহলে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কিভাবে যাবো। সেখানেও তো নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালের নার্সরা যদি জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।
 
তবে শিশুটি নিখোঁজের পেছনে পরিবারের অসচেতনাতাকেই দায়ী মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, শিশুটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়নি। তার মা অপরিচিতি এক মহিলার কাছে বাচ্চা কেন দিলো। সে মহিলাই তো চুরি করে নিয়ে গেছে। এখানে আমাদের ভুলটা কোথায়। বারান্দায় বসে যদি তার বাচ্চাকে অন্য কাউকে দেয়, সেটা তো আমরা পাহারা দিতে পারবো না। তবে এঘটনার পর হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সিসিটিভি বাড়ানো হয়েছে, গেটে সবসময় সিকিরিউটির লোক থাকে।

ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে মাঠে নেমেছে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও। জড়িতদের ধরতে তৎপরতা শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে অটোচালক ও এক সন্দেহজনক নারীকে আটকও করেছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা বলেন, ঘটনার পর থেকেই বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ পাইলেও চোরকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন থানায় ওই সিসিটিভি ফুটেজ পাঠানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে শিশুটি উদ্ধার করা যায়। আমাদের কোন অবহেলা নেই।

মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে নিরাপত্তা না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। চুরি হওয়া আব্দুর রহমানের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

শীর্ষনিউজ/এওয়াই