০৩:১৮ পূর্বাহ্ন সোমবার, ২৬-মে ২০২৫

গাজায় চলমান রক্তপাত ও মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা মালয়েশিয়ার

প্রকাশ : ২৫ মে, ২০২৫ ০৬:০৭ অপরাহ্ন

শীর্ষনিউজ, ঢাকা: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান রক্তপাত ও মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘দ্বিচারিতা’ ও ‘নীরবতা’-কে চরমভাবে আক্রমণ করেছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান।

আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বিশ্ব সমাজের দ্বিমুখী আচরণের নগ্ন উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

রোববার (২৫ মে) কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাসান বলেন, গাজায় চলমান বর্বরতা আন্তর্জাতিক আইনের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন। বিশ্ববাসীর এই নীরবতা কেবল উদ্বেগজনক নয়, তা মানবিক মূল্যবোধেরও অবমাননা।

তিনি আরও বলেন, আসিয়ান চুপ থাকতে পারে না। আমরা যারা শান্তি, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক ন্যায়ের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- আমাদের স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েল গাজায় আগের চেয়েও আরও ভয়াবহ অভিযান শুরু করেছে। যদিও গত ২ মার্চ আরোপিত পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, তবে তা মানবিক সহায়তার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বারবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও, ইসরায়েলের আগ্রাসন কমেনি। বরং ‘চূড়ান্ত ধাপের’ নামে ইসরায়েল পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই মালয়েশিয়া তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করল- যেখানে বর্বরতার প্রতিবাদ করার পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো।

মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশটির ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বরং সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে সরব।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর থেকে একাধিকবার সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।

ইতোমধ্যে দেশটি গাজায় ১ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। খাদ্য, ওষুধ, ও জরুরি চিকিৎসা উপকরণ বহনকারী বেশ কয়েকটি চালান এরই মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পৌঁছেছে।

বর্তমানে আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

ফেব্রুয়ারিতে আসিয়ানের ১০টি সদস্য রাষ্ট্রই এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের ‘দীর্ঘদিনের সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছিল। তবে মোহাম্মদ হাসানের মতে, কেবল বিবৃতি নয়, বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণও এখন সময়ের দাবি।

বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তি যখন এই সংকটে কার্যত চুপ, তখন মালয়েশিয়ার মতো একটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি শুধু রাজনৈতিক বার্তাই নয়, বরং এটি এক ধরনের নৈতিক প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিবৃতি একদিকে যেমন মুসলিম বিশ্বের সংহতির প্রতীক, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে- কোন মানুষের জীবনকে আমরা মূল্য দিই, আর কোন জীবন আমাদের কাছে অদৃশ্য?

শীর্ষনিউজ/বান্না
 

এই পাতার আরো খবর